• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ন |
  • English Version

ভৈরবে ৪৭০ হেক্টর জমি পানিতে প্লাবিত, সাড়ে ৬ কোটি টাকার ক্ষক্ষতি

# জয়নাল আবেদীন রিটন, সংবাদদাতা :-

ভৈরবে আকস্মিক বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আউস ধানসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির প্রায় ৪৭০ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৮শ জন চাষি লোকশানের মুখে পড়ছে। এতে করে আনুমানিক সাড়ে ৬ কোটি টাকার আবাদি ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন বলে বলে জানান স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জানা গেছে, ভারতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কারণে নেমে আসা পানিতে সিলেটের আকস্মিক স্বরণ কালের ভয়াবহ বন্যার ঢেউ লেগেছে ভৈরব উপজেলাতেও। হঠাৎ করে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয় ভৈরবের ৪টি ইউনিয়নের কয়েক‘শ বাড়ি-ঘরসহ এলাকায় আবাদকৃত ৪৭০ হেক্টর আউসধানসহ নানান ধরনের গ্রীস্মকালীন সবজি। তলিয়ে আছে চিচিংগা, ডেরস, করলা, মরিচ, কচুরমুখিসহ নানা ধরনের সবজি। ফলে সাড়ে ৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এই বছর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও উৎসাহ উদ্দিপনায় আগ্রহ নিয়ে আউস ধান চাষ করেছিল অনেক চাষী। কিন্তÍু হঠাৎ বন্যায় ধানের চারা পানিতে তলিয়ে যায়। দীর্ষ সময় আবাদি জমি পানির নিচে থাকায় চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে ভৈরব উপজেলার প্রায় ৩ হাজার ৮শ জন ধান ও সবজি চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লোকশানের মুখে পড়ে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা তৈরী করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে।
কৃষাণি সখিনা বেগম বলেন, এবার ৩ বিঘা জমিতে ধার-দেনা করে সবজি আবাদ করেছিলেন। স্বপ্ন ছিল জমির ফসল বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে। কিন্তু তার সুখের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সখিনা বেগমের ফসলি জমি। ফলে তিনি দু’চোখে এখন অন্ধকার দেখছেন।
কৃষক তাহের মিয়া বলেন, আমি দেড় বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরণের শাক সবজি চাষ করেছিলাম। হঠাৎ করে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় আমার সব ফসল তরিয়ে গেছে। আমি বড় ধরনের লোকশানের মুখে পড়েছি।
মে. বাচ্ছু মিয়া বলেন, বৈশাখি ধান কাটার পরে কৃষি অফিসারের পরামর্শে শ্রাবনি ধানের আবাদ করেছিলাম। ধান গাছগুলোতে মাত্র ধানের শীষ আসতে শুরু করেছিল। এমন সময় বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। আবাদি জমি তলিয়ে যাওয়ায় আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
কৃষক শাহ আলমসহ আরো কয়েকজন বলেন, আমাদের সমস্ত এলাকার জমির ধানসহ নানান ধরণের সবজি ক্ষেতগুলো উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের মত অনেকেই ধার দেনা করে ধানসহ সবজির আবাদ করেছিলাম। এ বছরের লোকশান আমরা আগামী বছরেও কাটিয়ে উঠতে পারব না। এ অবস্থায় সরকার যদি আমাদের দিকে একটু সু’নজর দেন তাহলে হয়তো আমরা একটু উপকৃত হতে পারব।
উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশ্রাফ আলী ভূইয়া বলেন, গত জুন মাসে বৃহত্তর সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভী বাজার ও কিশোরগঞ্জ জেলা বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যার পানি থেকে বাদ পরেনি ভৈরব উপজেলার নিম্নাঞ্চলও। মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়ে ঘরবাড়ি, শাকসবজি ও আউস ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এই বছর ভৈরব উপজেলায় ৪১৫ হেক্টর আউস ধান ও ৫৫ হেক্টর বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি আবাদের পর হঠাৎ বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এতে করে ৩ হাজার ৩৫০ জন আউসচাষী ও ৪৪০ জন শাকসবজি চাষী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর ফলে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে। এই বছর ১ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আউস এবং ২৭৬ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছিলো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *